স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট নিয়ে ১০টি ভুল ধারণা, যেগুলো এখনই ভাঙা উচিত

স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট নিয়ে ১০টি ভুল ধারণা, যেগুলো এখনই ভাঙা উচিত

ঢাকার কোনো বিউটি স্টোরে ঢুকুন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করুন, একটি বিষয় সবসময় নজরে আসবে—স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্টফেয়ারনেস ক্রিম, গ্লুটাথিওন ইনজেকশন থেকে শুরু করে উন্নত স্কিন লাইটেনিং প্রসিডিউর, ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের প্রতিশ্রুতি আজকাল সবার নজরে।

কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে এসেছে অসংখ্য ভুল ধারণা। অনেকেই জানেন না আসলে এগুলো কীভাবে কাজ করে, কতটা নিরাপদ, বা ফলাফল কতটা দীর্ঘস্থায়ী। আজ আমরা ভেঙে দেবো সবচেয়ে সাধারণ ১০টি মিথ, যাতে আপনি সচেতন হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

মিথ ১: স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্টে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায়

অনেকে মনে করেন একটি ক্রিম, একটি ক্যাপসুল বা একটি ইনজেকশন নিলেই রাতারাতি ত্বক ফর্সা হয়ে যাবে। বাস্তবতা হলো, স্কিন হোয়াইটনিং ধীরে ধীরে ঘটে

ক্রিম, সাপ্লিমেন্ট বা ইনজেকশন—যাই ব্যবহার করুন না কেন, ফলাফল দেখতে সময় লাগে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস। দ্রুত ফলের প্রতিশ্রুতি সাধারণত বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে।

মিথ ২: শুধু ক্রিম ব্যবহার করলেই স্থায়ীভাবে রঙ বদলে যাবে

অনেকে মনে করেন ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করলেই স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়া যায়। আসলে বেশিরভাগ ক্রিম সাময়িকভাবে মেলানিন কমায় বা মৃত কোষ সরায়।

ব্যবহার বন্ধ করলে আবারও স্বাভাবিক রঙ ফিরে আসে, বিশেষ করে রোদে বের হলে। তাই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা সবসময় সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

মিথ ৩: গ্লুটাথায়ন ইনজেকশন হলো যাদুকরী সমাধান

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে গ্লুটাথিওন ইনজেকশন জনপ্রিয় হয়েছে স্কিন লাইটেনিং-এর জন্য। পিগমেন্টেশন দুর করা, স্কিন ফর্সা করা, দাগ দুর করা ও বয়সের ছাপ দূর করা গেলেও এটা চিরস্থায়ী সমাধান নয়। অনেকক্ষেত্রেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।

কিছু মানুষের ত্বক ফর্সা হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে কেবল উজ্জ্বল ও ফ্রেশ লুক দেখা যায়। তাছাড়া উচ্চমাত্রার ইনজেকশনের নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা চলছে, তাই এটি কেবল প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অধীনে নেওয়া উচিত।

মিথ ৪: স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট ১০০% নিরাপদ

কোনো প্রসাধনী চিকিৎসাই শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। ভেজাল হোয়াইটনিং ইনজেকশন বা নিম্নমানের ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হওয়া, দাগ বা এমনকি অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো কোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং কেবল বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনা। দামে কম পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

মিথ ৫: কেবল মেয়েরাই স্কিন হোয়াইটনিং করে

এটি সবচেয়ে পুরনো মিথগুলোর একটি। বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে ছেলেরাও স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন

অনেকের লক্ষ্য শুধু ফর্সা হওয়া নয়, বরং ব্রণের দাগ, পিগমেন্টেশন ও অসম ত্বকের সমস্যার সমাধান। আসলে স্কিনকেয়ার সবার জন্য, লিঙ্গভেদে নয়।

মিথ ৬: ফর্সা হলেই আত্মবিশ্বাস আসে

বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়ই দেখায় ফর্সা মানেই আত্মবিশ্বাস আর সফলতা। কিন্তু আত্মবিশ্বাস আসে নিজেকে ভালোবাসা ও সুস্থ ত্বক থেকে। সাদা স্কিন থেকে সুস্থ স্কিন আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্টে চেহারার উন্নতি হতে পারে, কিন্তু আত্মমূল্যায়ন নির্ভর করে না ত্বকের রঙের ওপর।

মিথ ৭: ঘরোয়া উপায় সবসময় নিরাপদ ও কার্যকর

লেবুর রস, হলুদের মাস্ক—এসব ঘরোয়া পদ্ধতিকে অনেকে মনে করেন সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু সব প্রাকৃতিক উপাদান নিরাপদ নয়।

যেমন লেবুর রস রোদে বের হলে ত্বকে পোড়া ধরাতে পারে। তাই “প্রাকৃতিক” মানেই সবসময় “নিরাপদ” নয়।

মিথ ৮: যত ফর্সা, তত সুস্থ

ত্বকের রঙের সঙ্গে স্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং অতিরিক্ত স্কিন লাইটেনিং করলে ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা নষ্ট হয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

সুস্থ ত্বকের মানে হলো আর্দ্রতা, সান প্রোটেকশন আর সঠিক খাবার—রঙ নয়।

মিথ ৯: যত বেশি চিকিৎসা, তত দ্রুত ফল

অনেকে মনে করেন একসঙ্গে বেশি ক্রিম, ইনজেকশন বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাবেন। বাস্তবে উল্টোটা হয়।

অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকে র‍্যাশ, অ্যালার্জি বা স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। নিরাপদ ও নিয়মিত চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর।

মিথ ১০: হোয়াইটনিং-এর ফলাফল চিরস্থায়ী

সবচেয়ে উন্নত ট্রিটমেন্টও স্থায়ী নয়। সূর্যের আলো, দূষণ, বয়স বা হরমোন পরিবর্তনের কারণে ত্বকের রঙ বদলাতে পারে।

তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর সঠিক যত্ন ছাড়া কোনো ফলাফল টিকবে না।

শেষকথা

স্কিন হোয়াইটনিং ট্রিটমেন্ট নিয়ে এতগুলো ভুল ধারণা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ বা অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।

বাস্তবতা হলো, কার্যকর চিকিৎসার জন্য সময়, ধৈর্য, সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বাস্তব প্রত্যাশা জরুরি। আর সবচেয়ে বড় কথা, উজ্জ্বল ত্বক মানেই সুন্দর ত্বক—তার রঙ যাই হোক না কেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
WhatsApp